Wednesday, June 28, 2017

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের হ্যাং (ফ্রিজ) সমস্যার কারণ এবং প্রতিকার

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের হ্যাং (ফ্রিজ) সমস্যার কারণ এবং প্রতিকার


আপনি যত হাই এন্ডের স্মার্টফোনই ব্যবহার করে থাকেন না কেন নিশ্চয়ই কখনও না কখনও আপনার স্মার্টফোনে হ্যাং হয়ে যাওয়া বা, ফ্রিজ হয়ে যাওয়া সমস্যাটির সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনাকে। হ্যাঁ, হাই এন্ডের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোতেও এই সমস্যাটি দেখা যায়; খুবই কম সংখ্যকবারের জন্য হলেও বেশি মূল্যের স্মার্টফোনেও এই সমস্যাগুলোর দেখা মেলে। আর লো-এন্ডের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রায়ই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যেমন আমাকে। কিন্তু কেন এই ফ্রিজ সমস্যাটি দেখা দেয়? চলুন, সমস্যাটির কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

ফ্রিজ সমস্যার কারণ 

প্রথমে চলুন স্মার্টফোনের এই হ্যাং হয়ে যাওয়া বা ফ্রিজিং সমস্যার পেছনের সম্ভাব্য কারণগুলো জেনে নেয়া যাক।

  • একসাথে অনেকগুলো অ্যাপলিকেশন রান করে রাখলে।
  • ইন্টারনাল স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে গেলে।
  • এক্সটারনাল স্টোরেজ একেবারে পূর্ণ হয়ে গেলে।
  • ইন্টারনাল স্টোরেজে বেশি সংখ্যক অ্যাপলিকেশন বা গেম ইন্সটল করা হলে।
  • কুকি, ক্যাশ এবং লগ ফাইল বেশি জমে গেলে।
  • অনেক বেশি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করলে।
  • লো-র‍্যামেও বড় আকারের অ্যাপলিকেশন রান করলে।
  • ভারী থিম ব্যবহার করলে।
  • আনসাপোর্টেড বা কম্প্যাটিবল নয় এমন  অ্যাপলিকেশন বা গেম ইন্সটল করলে।
  • স্মার্টফোনের অ্যানিমেশনের স্কেল বাড়িয়ে ব্যবহার করলে।


ফ্রিজ সমস্যার প্রতিকার 

আমরা ফ্রিজ সমস্যার পেছনে কাজ করা সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে জেনে নিয়েছি। এবার চলুন, এই সমস্যা থেকে কীভাবে কিছুটা হলেও প্রতিকার পাওয়া যাবে সেসম্পর্কে জেনে নেই।
  • যতটুকু সম্ভব আপনার স্মার্টফোনের ইন্টারনাল মেমরি ফাঁকা রাখতে চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে যে অ্যাপলিকেশন বা গেমগুলো মেমরি কার্ডে ইন্সটল করা সম্ভব সেগুলো মেমরি কার্ডে ইন্সটল করুন। এতে করে ইন্টারনাল মেমরির উপর থেকে প্রেশার কমে যাবে। ইন্টারনাল মেমরি ফাঁকা রাখলে ফ্রিজিং প্রবলেম হয় না বললেই চলে।নোট – তবুও যদি ইন্টারনাল মেমোরিতে বেশ কিছু অ্যাপলিকেশন ইন্সটল হয়ে যায় তবে স্মার্টফোন রুট করে লিংক২এসডি টুলটির সাহায্যে সহজেই সেই অ্যাপলিকেশনগুলোকে আপনি মেমরিকার্ডে ট্রান্সফার করতে পারবেন। তবে যদি আপনি খুবই বেসিক পর্যায়ের ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে রুটিং প্রসেসে না জড়ানোই আপনার জন্য শ্রেয় বলে আমি মনে করি। 
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপলিকেশনগুলো আপনার স্মার্টফোন থেকে আনইন্সটল করে দিন। এর ফলে শুধুমাত্র স্টোরেজই নয় বরং আপনার স্মার্টফোনের কিছু র‍্যাম রিসোর্সও ফাঁকা হবে এবং অ্যান্ড্রয়েডের এই ফ্রিজিং সমস্যাও কিছুটা কমবে।নোট – যদি অপ্রয়োজনীয় অ্যাপলিকেশনগুলো আপনার পরে লাগতেও পারে বলে মনে করেন তবে সেগুলো না হয় কম্পিউটার বা মেমরি কার্ডে সংরক্ষণ করে রাখলেন যাতে প্রয়োজনের সময় কোন ডাটা সংযোগ ব্যবহার না করেই সেগুলো আবার আপনি খুব সহজেই ইন্সটল করে নিতে পারেন। 
  • এমন কোন অ্যাপলিকেশন বা গেমস ব্যবহার করবেন না যেগুলোর রিকোয়েরমেন্টে যে স্পেসিফিকেশনগুলো চাওয়া হয়েছে সেগুলো আপনার স্মার্টফোনটিতে নেই।
  • আপনার স্মার্টফোনে র‍্যাম রিসোর্স তুলনামূলক ভাবে কম থাকলে ভারী অ্যাপলিকেশন বা গেম রান করবেন না। এতে করে স্মার্টফোন হ্যাং হবেনা বা কোন ল্যাগ অনুভূত করবেন না আপনি।
  • বড় কোন অ্যাপ বা গেম রান করার সময় সিস্টেমের অপ্রয়োজনীয় প্রসেসগুলো কিল করে নিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েডে সিস্টেম টাস্ক কিল করার জন্য ডিফল্ট টাস্ক কিলার রয়েছে তবে আপনি চাইলে ‘Advance Task Killer’ বা ‘Easy Task Killer’ নামের অ্যাপলিকেশনগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্রাউজ করার সময় যথাসম্ভব কম ট্যাব খুলে কাজ করতে চেষ্টা করবেন। কেননা বাজেট স্মার্টফোনগুলোতে বেশি ট্যাব অতিরিক্ত র‍্যাম রিসোর্স ব্যবহার করে থাকে ফলে স্মার্টফোনটি হ্যাং বা ফ্রিজ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
  • কিছুদিন পরপর বিভিন্ন অ্যাপলিকেশনের কুকি, লগ ফাইল এবং ক্যাশ ফাইলগুলো পরিষ্কার করুন।

স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়ার কারন সমূহ



দেখুন যদি গরম হওয়ার কথা বলি তবে বলতেই হয় যে প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বা মেশিন ই গরম হয়। উদাহরণ সরূপ আপনার গাড়ি, কম্পিউটার ইত্যাদি সব কিছুই গরম হওয়া থেকে বিরত নয়।গাড়ি ঠাণ্ডা রাখতে পানি ঢালা হয়, কম্পিউটার ঠাণ্ডা রাখতে ফ্যান ব্যবহার করা হয় তাছাড়া এর ভেতর HeatSheild থাকে। তো আসলে বলতে পারেন স্বাভাবিক ভাবে স্মার্টফোন একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হওয়ার কারনে এটি গরম হয়। তারপরও আমি আপনাদের সব কিছু খুলে বলবো। তো চলুন জেনে নেয় স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়ার কারন সমূহ।

প্রসেসরঃ স্মার্টফোন গরম হওয়ার জন্য প্রথম যে দায়ী তা হলো প্রসেসর। প্রসেসর আপনার ফোন এর প্রধান অঙ্গ সরূপ। যে আপনার ফোন এর প্রতিটি কাজ করে থাকে। আপনি ফোন ব্যবহার করেন আর নাই বা করেন প্রসেসর কিন্তু সবসময় চলতে থাকে এবং তার কাজ করতে থাকে। আর এই প্রসেসর নির্মাণ করা হয় অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে। এবং এর ভেতর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  ইলেকট্রন থাকে। যখন প্রসেসর তার কাজ করে তখন এই ইলেকট্রন গুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে (সহজ ভাষায়)। এবং এই দৌড়াদৌড়ি করার সময় ইলেকট্রন গুলো নিজেদের ভেতর সংঘর্ষ ঘটায় এবং তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ আপনার প্রসেসর যত বেশি কাজ করে তাপ ও ততো বেশি উৎপাদন হয়। আপনি যদি কম কাজ করেন, যেমন ধরুন শুধু ফোন এ কথা বলছেন, কিংবা মিউজিক শুনছেন তবে আপনার ফোনটি কম গরম হবে। কিন্তু মনে করেন আপনি গেম খেলছেন এবং একসাথে ইন্টারনেট থেকে কোনো ফাইল ও ডাউনলোড করছেন, তবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ফোন এর প্রসেসর কে বেশি কাজ করতে হবে এবং যার ফলে বেশি গরম হবে আপনার স্মার্টফোনটি। আজকাল কার স্মার্টফোন গুলো দিন এর পর দিন চিকন হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রসেসর এর দ্বারা উৎপন্ন তাপ আপনার ফোনটি চিকন হওয়ার কারনে বের হতে পারে না। এবং লক্ষ করলে দেখা যাবে যে আপনার ফোন এর প্রসেসরটি ফোন বডির সাথেই লেগে থাকে, যার ফলে খুব তারাতারি এবং অত্যাধিক গরম অনুভূত হয়।
অত্যাধিক লোডঃ আমি আগেই বলেছি অত্যাধিক লোড ফেললে আপনার ফোনটি দ্রুত এবং বেশি গরম হবে। স্বাভাবিক কাজ যেমন ফোন এ কথা বলা, এসএমএস সেন্ড করা বা গান শোনার মত ছোট কাজ এ কম গরম হবে আপনার ফোনটি। কিন্তু আপনি যখন অনেক গুলো কাজ এক সাথে করবেন বা কোনো বড় কাজ করবেন তখন আপনার ফোনটি অত্যাধিক লোড এর সম্মক্ষিন হবে এবং স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হবে।

ব্যাটারিঃ স্মার্টফোন গুলো দিনদিন চিকন হয়েই চলছে। কিন্তু ব্যাটারি প্রযুক্তিতে তেমন একটা বিশেষ উন্নতি আনা হচ্ছে না। তারপর ফোনটি অনেক চিকন হওয়ার কারনে  যন্ত্রপাতি গুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব থাকে না। ব্যাটারি চার্জ বা ডিসচার্জ হওয়ার সময় কম বেশি গরম হয়েই থাকে। আর যন্ত্রপাতি গুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব না থাকার ফলে এই ব্যাটারির গরম সব দিকে ছড়িয়ে পরে এবং আপনার স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।

পরিবেষ্টিত তাপমাত্রাঃ স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম, হওয়ার আরেকটি বড় কারন কিন্তু পরিবেষ্টিত তাপমাত্রা হতে পারে। সাধারন ভাবে গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যায়। এই পরিবেশে আপনি ঘরে বসে থাকলেও আপনার আসেপাশের তাপমান থাকে প্রায় ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই তাপমান এর ভেতর আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে এটি আরো তাড়াতাড়ি গরম হয়ে পরবে।

দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনালঃ মনে করুন আপনি এমন এক জায়গায় আছেন, যেখানে নেটওয়ার্ক সিগনাল খুব দুর্বল। অথবা আপনার ওয়াইফাই সিগনাল অনেক কষ্টে আপনার স্মার্টফোন অবধি আসছে। এই অবস্থায় আপনার স্মার্টফোন এ বেশি চার্জ খরচ হয়। দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনাল পাওয়ার জন্য আপনার ফোনটি অ্যান্টেনাতে বেশি পাওয়ার প্রয়োগ করে, যাতে ফোনটি ভালো সিগনাল ধরতে পারে। এতে স্মার্টফোনটির প্রসেসরকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এবং স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।